ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হতাশায় কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রোভাইডাররা, বেতন নেই ৩ মাস ধরে

হতাশায় কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রোভাইডাররা, বেতন নেই ৩ মাস ধরে

বিগত ৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না জেলার ৪৯৫ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। এনিয়ে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে বেতন না পাওয়া এই স্বাস্থ্য কর্মীদের মাঝে।

তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্মকর্তাসহ দায়িত্বশীলরা। এর ফলে স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে দুঃশ্চিন্তার ভার আরও বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে বেতন না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার গৌরীপুর উপজেলার মহিশ^রণ কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মো: জহিরুল ইসলাম।

একই অবস্থা জেলার ১৩টি উপজেলার ৪৯৫ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের। জেলার নান্দাইল, ঈশ^রগঞ্জ, গৌরীপুর ও সদর উপজেলার প্রোভাইডাররা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জহিরুল ইসলাম আরও বলেন, স্বল্প বেতনে নিয়মিত কাজ করেও মাস শেষে বেতন পাচ্ছি না। আমাদের বেতন কেন ছাড় হচ্ছে না তাও জানি না। উপজেলা কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চেয়েও কোন উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। শুনেছি সারাদেশের একই অবস্থা।

একই ধরনের বক্তব্য জেলার নান্দাইল উপজেলার বারুইগ্রাম কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রোভাইডার সোহাগোজ্জামান উজ্জলের। তিনি বলেন, আমার মত সারাদেশের কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের একই অবস্থা। বিগত ৩ মাস ধরে কেউ বেতন পাচ্ছে না। শুনেছি অর্থ ছাড় না হওয়ায় বেতন আটকে আছে, কবে ছাড় হবেও তা জানি না।

সদর উপজেলার মধ্য বাড়েরা কমিউনিটি মডেল ক্লিনিকের প্রোভাইডার মো: খুশবুন্নাহার জানান, চলতি বছরের জুন মাসে সর্বশেষ বেতন পেয়েছিলাম। এরপর থেকে বিগত ৩ মাস আমরা বেতন পাচ্ছি না, চলতি মাসেও পাব বলে মনে হয় না। তবে কেন বা কি কারণে বেতন হচ্ছে না, এবিষয়ে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষও কিছু বলছেন না। এই অবস্থায় বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে দিনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

একই উপজেলার তারাগাই কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রোভাইডার মো: মাঈন উদ্দিন জানান, বিগত ১২ বছর ধরে আমার মত জেলায় ৪৯৫ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার কাজ করছেন। অতীতে প্রতি মাসে নিয়মিত বেতন হলেও বিগত ৩ মাস ধরে আমাদের বেতন হচ্ছে না। কথাছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ট্রাস্ট গঠনের মাধ্যমে আমাদের সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা দিবেন। কিন্তু এখন আমরা বেতনই পাচ্ছি না।

সদর উপজেলার খাগডহর ক্লিনিকের কর্মী উম্মে কুলছুম বলেন, এক যুগ ধরে একই বেতনে চাকরি করছি, কোন পরিবর্তন নেই। রাজস্ব খাতে নেওয়ার কথা বললেও এখন বেতনই পাচ্ছি না। এই অবস্থায় সংসার নিয়ে চলা দায় হয়ে পড়েছে। আশা করছি স্বাস্থ্যকর্তারা কর্মীদের এই কষ্ট অনুভব করবেন।

স্বাস্থ্যকর্মীরা আরও জানায়, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সরকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। এতে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৪ হাজারের অধিক মানুষের। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বন্ধের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছি।

এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেতন ছাড় না হলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে কাজের আগ্রহ ও মনযোগ নষ্ট হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। ফলে বিষয়টি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

তবে বেতন বন্ধ রয়েছে কি-না, জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শাজাহান কবীর।

এ সময় তিনি বেতন না পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, শুরু থেকেই ৩ মাস পর পর কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীদের বেতনের বরাদ্ধ ছাড় হয়। তাহলে- বেতন বন্ধ হবে কেন ? প্রতিবেদনকে এমন উল্টো প্রশ্ন করে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি। এ সময় একাধিকবার তাকে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: মামুনুর রশিদ জানান, সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো একটি প্রকল্পের অধিনে চলছে। মূলত ওই প্রকল্পই কমিউনিটি ক্লিনিকের বেতন ছাড় দেয়। তবে বিগত জুলাই মাস থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় আপাদত বেতন আটকে আছে। আশা করছি অর্থপ্রাপ্তি হলেই বেতন পাবে কর্মীরা।

তবে জেলা সিভিল সার্জন ডা: মো: নজরুল ইসলাম বলেন, বেতন বন্ধের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যারা নিয়মিত কাজে আছে, তাদের বেতন বন্ধ নেই। কিন্তু কেউ যদি নিয়মিত অফিস না করে বা কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তার বেতন বন্ধ থাকতে পারে।

এবিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা: মো: শফিউর রহমান কল রিসিভ করেননি।

বেতন,ক্লিনিক,কমিউনিটি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত